বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্মত্য সেনের আত্মপরিচয় লিখি|৮ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান

বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্মত্য সেনের আত্মপরিচয়
বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্মত্য সেনের আত্মপরিচয়

আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্মত্য সেনের আত্মপরিচয় লিখি নামক ৮ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই এর অনন্যতায় একাত্মতা অধ্যায় থেকে পৃষ্ঠা ২০ এর কাজের সমাধান।

অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের সংক্ষিপ্ত জীবন-কথা

অমর্ত্য সেনের জন্ম ১৯৩৩ সালে শান্তিনিকেতনে। বাবা আশুতোষ সেন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক। মা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের অতি ঘনিষ্ঠজন শান্তিনিকেতনের প্রধান ব্যক্তিদের একজন, পন্ডিত ক্ষিতিমোহন সেনশাস্ত্রীর কন্যা অমিতা সেন। ক্ষিতিমোহন ছিলেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। প্রাচীন বৈদিক হিন্দু শাস্ত্র সম্পর্কে সুশিক্ষিত এবং মধ্যযুগের উত্তর ও পূর্ব ভারতে হিন্দি ও নানা দেহাতি ভাষায় যে মানবতাবাদী লোকধর্মের চর্চা হয়েছিল, তাঁর একজন অনুরাগী পাঠক ও গবেষক। তাঁর কথা একটু বেশি বললাম, কারণ ,অমর্ত্য সেনের মানস গঠনে তাঁর যথেষ্ট অবদান ছিল। পিতার সূত্রে তাঁর মা অমিতা সেন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্যা এবং রবীন্দ্রনৃত্যের প্রথম যুগের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন। সেই সুবাদে তাঁর সন্তানের নামকরণ করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

অমর্ত্য সেনের পড়াশোনাশুরু হয়েছিল ঢাকায় সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে। তারা থাকতেন তখনকার ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা ওয়ারীতে। পরে অমর্ত্য বাবা-মায়ের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে চলে আসেন এবং সেখানকার স্কুল পাঠভবনে ভর্তি হন। পরে সেখানকার কলেজ থেকে আইএসসি (এখনকার এইচএসসি) পাস করেন। এখানে তিনি অনেক বিশিষ্ট শিক্ষক, অধ্যাপক, সাহিত্যিক, শিল্পীর সান্নিধ্যে আসেন। আর সেখানে ছিল অবারিত প্রকৃতি, সংগীত ও সংস্কৃতির এক প্রাণবন্ত পরিবেশ। এই পরিবেশ তাঁর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করেছে। আর তা মানুষটির বহুমাত্রিক পরিচয় তৈরির সহায়ক হয়েছে।

তারপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েছেন অর্থনীতি নিয়ে। সেখানেও সহপাঠী এবং শিক্ষক উভয় দিক থেকেই তিনি ছিলেন সৌভাগ্যবান। নিজের কৃতিত্বে ও বাবার সহযোগিতায় পরে পড়তে যান ইংল্যান্ডে। সেখানে ক্যামব্রিজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন ও পিএইচডি করেন। তারপরে দেশে ফিরে দিল্লি ও কলকাতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়িয়েছেন। একসময় ফিরে আসেন ইংল্যান্ডে। পরবর্তী দীর্ঘকাল ইংল্যান্ড, বিশেষত ক্যামব্রিজ ছিল তাঁর আবাস। প্রায় ১০ বছর তিনি আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও দর্শন বিষয়ে অধ্যপনা করেন। তিনি দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ, ক্ষমতা এবং সর্বোপরি কল্যাণ অর্থনীতি বিষয়ে গবেষণা করে যুগান্তকারী বই লিখেছেন। অর্থনীতিতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৮ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। অর্থনীতির পাশাপাশি তিনি দর্শনও পড়িয়েছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেলজয়ী সাহিত্যিক নাদিন গার্ডিমার অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে আখ্যা দিয়েছেন ‘বিশ্ব বুদ্ধিজীবী’। তাঁকে বিশ্ব বিবেকও আখ্যা দেওয়া যায়। তিনি যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছেন, তেমনি স্বৈরতন্ত্র হটিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায়ও পাশে থেকেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে অমর্ত্য সেন একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমানে প্রায় ৯০ ঊর্ধ্ব বয়সেও পৃথিবী ও মানবতার যেকোনো সংকটে তাঁর বিবেকী কন্ঠস্বর শুনে আমরা আশ্বস্ত হই।

অমর্ত্য সেন তাঁর বইতে বলেছেন, মানুষ যখন তার বহু পরিচয় ভুলে কোনো একটি পরিচয়কে প্রকট করে তোলে, তা নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, তখন তার মধ্যে বিবেচনা কমে গিয়ে আবেগের প্রাবল্য দেখা দেয়, যুক্তির পরিবর্তে অন্ধ বিশ্বাস জন্মায়। আমরা জানি, অন্ধ রাগ থেকে আরও অনেক নেতিবাচক বোধের জন্ম হতে পারে। এতে সহানুভূতির পরিবর্তে ঘৃণার জন্ম হয়। এর ফলে শান্তি নষ্ট নয়। অনেক সময় দেখা যায়, ফুটবল খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের অন্ধ সমর্থকদের মধ্যে মারামারি লেগে যায়। সেই সময় মানুষগুলোর মনে কেবলমাত্র ক্লাবের প্রতি আনুগত্যই প্রাধান্য পায়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বাঙালি নিধনের উন্মত্ততায় আমরা হতবাক হয়ে যাই। তেমনি আবার ভরসা ফিরে পাই যখন দেখি, পৃথিবীর ভিন্ন ভাষী ভিন্ন ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ন্যায্য লড়াইয়ের সমর্থনে এগিয়ে আসে। ব্রিটিশ গায়ক জর্জ হ্যারিসন ও সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশংকর ১৯৭১ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। ফ্রান্সের লেখক ও পরে মন্ত্রী আঁদ্রে মালরো সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলন। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান যেমন পাশাপাশি লড়াই করেছে, তেমনি জীবনও দিয়েছে একসঙ্গে। বোঝা যায় ,সব মানুষ কখনো একসঙ্গে তাঁদের বোধ বিবেচনা হারায় না।

বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্মত্য সেনের আত্মপরিচয় লিখি

বইতে আমাদেরকে অর্মত্য সেন সম্পর্কে পড়ার পর নিচের মত ছবি দিয়ে বলা হয়েছে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্মত্য সেনের আত্মপরিচয় লিখতে। তো এখানে দেয়া এই কাজটির সমাধান দেয়া হল। তোমরা নিচের মত করে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্মত্য সেনের আত্মপরিচয় লিখতে পারবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:

  • রাজনৈতিক দর্শন: উদারনীতিবাদ, ন্যায়বিচার
  • রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড: মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সমর্থক, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রবল পক্ষপাতী
  • অভিজ্ঞতা: ঔপনিবেশিক শাসন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রত্যক্ষকরন
  • পুরষ্কার: নোবেল স্মৃতি পুরস্কার (অর্থনীতি), ভারতরত্ন

পারিবারিক প্রেক্ষাপট:

  • বাবা: আশুতোষ সেন, রসায়ন শিক্ষক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
  • মা: অমিতা সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠজন এবং রবীন্দ্রনৃত্যের শিল্পী
  • ঠাকুর: ক্ষিতিমোহন সেনশাস্ত্রী, শিক্ষক (সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে)
  • স্ত্রী: ইভা সেন, অর্থনীতিবিদ
  • সন্তান: তিন কন্যা – অন্তরা, নন্দিনী, এবং ইন্দ্রা

ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট:

  • জন্মস্থান: শান্তিনিকেতন, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
  • বেড়ে ওঠা: ঢাকা, বাংলাদেশ এবং শান্তিনিকেতন, ভারত
  • কর্মজীবন: ভারত, যুক্তরাজ্য, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
  • বর্তমান বাসস্থান: লন্ডন, যুক্তরাজ্য

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট:

  • অনুপ্রাণিত: শান্তিনিকেতনের পরিবেশে বেড়ে ওঠা, যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ লালন করে।
  • আগ্রহ: বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি
  • বিশ্বাসী: মানবতাবাদ, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধ
  • খ্যাতি: বিশ্ব বুদ্ধিজীবী ও বিশ্ব বিবেক
  • পরিচয়: বহুমাত্রিক পরিচয়

Techprithibi ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করতেঃ এখানে ক্লিক করুন
Techprithibi ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকতে এই পেজ ভিজিট করুন
– গুগল নিউজে Techprithibi সাইট ফলো করতে এই লিংকে
Techprithibi সাইটে লিখতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে
– প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে নিয়মিত ভিজিট করুন www.techprithibi.com সাইট।

শেয়ার করুন
কমেন্ট করে আপনার মতামত প্রকাশ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *